ইলা চৌধুরী। গ্রামের বাড়ি ডাকবাংলো, নীলফামারী জেলা। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে শিক্ষকতার পাশাপাশি এখন পার্লার ও হস্তশিল্পের ব্যবসা করার মাধ্যমে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ইলা চৌধুরী স্বাধীন বাংলা24 কে জানান, প্রথম দিকে অনেকটা শখের বসেই তিনি তার ফুফু আবিদা সুলতানা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে দুজনে ২০১৭ সালে হস্তশিল্প ও ২০১৮ সালে পার্লার চালু করেন। তার ফুফু মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বিউটিফিকেশন ট্রেইনার হিসেবে কর্মরত হওয়ায় কাজটি তার জন্য আরও সহজ হয়ে যায়। তার ফুফু ২০১১ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর শত শত মেয়েকে বিউটিফিকেশনের ট্রেনিং দিয়ে সাবলম্বি করে তুলেছেন। তার শেখানো পথে এখন শত শত মেয়ে পার্লার দিয়ে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
ইলার কাছে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শখের বশে শুরু করলেও তিনি এখন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি নীলফামারী থেকে সমগ্র দেশ সহ বিদেশেও হস্তশিল্পের পোশাকের ব্যবসা করেছেন।
তিনি বিদেশে ব্যবসা চালু করার ব্যাপারে জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে তার চাচাতো বোনের সুপার শপের জন্য ২০০ ড্রেসের অর্ডার করলে হস্তশিল্পের ড্রেস প্রথম চালান হিসেবে ফিলাডেলফিয়ায় পাঠান। আমারিকায় মেকিং চার্জ বেশি তাই ২০০ ড্রেস তাকে সেলাই করে পাঠাতে হয়। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ৫টা দর্জির বাসায় ঘুরে ঘুরে অনেক কষ্টে তিনি ২০০ ড্রেস সেলাই করে পাঠিয়েছিলেন।
তিনি তার পোশাক সম্পর্কে বলেন, হাতের কাজের পোশাকগুলো ছিল সত্যিই অসাধারণ। অন্যান্য পোশাকের চেয়ে আলাদা ধরনের। আমাদের দেশের হাতের কাজের জিনিসের কদর বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। হাতের কাজের জিনিসগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি অনেক ভালো মানের। দিন দিন আমার হাতের কাজের পোশাকে যুক্ত হচ্ছে নতুনত্ব এবং সেই সাথে বাড়ছে চাহিদাও।
তিনি তার স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, আমি একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন বুনি। প্রতিদিন নতুন কিছু করতে আমার খুব ভালো লাগে। আমার স্বপ্ন বুনার কারিগর ছিল আমার বাবা, মা, আব্ব। আমার আব্বুর নাম ইনামুল চৌধুরী। তিনি জর্জ কোর্টের জেলা নাজির এবং আম্মু পরিবার পরিকল্পনাতে চাকরি করেন। আমার আব্বুর কাছে থেকে আমি যখন যা চেয়েছি, সেভাবেই পেয়েছি। এখন আমর স্বপ্ন বুনার কারিগর আমার স্বামী। আমার বরের নাম আশরাফুজ্জামান এবং তিনি জনতা ব্যাংকের রামগন্জ, নীলফামারী শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। আমার কোন কিছুতেই তার কোন নিষেধ নেই। আমার সব কিছুই তার কাছ থেকে শেখা। কম্পিউটার, বাংলা টাইপ, গণিত এবং এমনকি আমার চাকরির পিছনেও তার অনেক অবদান রয়েছে। আমি চাকরির জন্য কোথাও পড়ালেখা করিনি। তিনি নিজে আমাকে হাতে ধরে সব কিছু পড়িয়েছেন। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে আমার ফুপি, আম্মুর অনেক অবদান ছিল। আম্মু সবকিছুতে নিষেধ করলেও আমি যখন ব্যবসা শুরু করলাম তিনি আমাকে সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন।
তিনি তার উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম দিকের বাঁধাগুলো সম্পর্কে বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিলনা। পদে পদে মানুষের কথা শুনতে হয়েছে। অনেকেই আমাকে বলেছিল আমি এবং আমার স্বামী ভালো চাকরি করি এবং ভালো পরিবারের মেয়ে হয়েও কেনো কাপড় বিক্রি করছি। কিন্তু আমার মনে আত্ববিশ্বাস ছিল আমি পারবো। তাইতো আমি নিজের দুইটা সন্তানকে সামলিয়ে এবং সবকিছু ঠিকঠাক মতো গুছিয়ে নিয়ে নিজকে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নিয়োজিত করতে পেরেছিলাম। আমার স্বপ্নটা বরাবরের মতোই অনেক বড় ছিলো এবং আমি ছোটবেলা থেকেই চেয়েছিলাম ভিন্ন কিছু করতে৷ সারাদিনের ব্যস্ততা সামলে নিয়ে আমি এখন নিজের জন্যও সময় বের করে নিয়েছি৷
ইলা চৌধুরী সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যর্থতা হলো শেখার একটা অংশ, জীবনে কোন কাজে কখনো হাল ছাড়ে দেয়া উচিত নয়। ততক্ষণ পর্যন্ত লেগে থাকতে হবে যতক্ষণ না সফলতা আসে। ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সফলতা আসবে। তাই একবার হলেও নিজেকে যাচাই করে নেয়া উচিত।